Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

গ্রাম সালিস ব্যবস্থা

১) সালিস
মানুষসামাজিক জীব৷ সমাজ মানুষের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে৷ সমাজমানুষকে দেয় নিরাপত্তার সাথে বসবাসের সুযোগ , আবার সমাজে মানুষ নানাপ্রতিকূল অবস্থার শিকার হয়৷ বিবাদ-বিসংবাদ , কলহ-ঝগড়া সমাজে লেগেই থাকে৷বিবাদ-ঝগড়ায় মধ্যস্থতা বা সালিসী এক চিরায়ত ব্যবস্থা৷ সমাজেসৌহার্দ-সম্প্রীতি এবং সহযোগীতারমনোভাব গড়ে তুলতে সালিসী ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম৷ কোর্টের মামলার বিচারব্যয়বহুল এবং অনেক সময়ের ব্যাপার বলে গ্রাম অঞ্চলে সালিস বেশ জনপ্রিয়৷
২) সালিসী ব্যবস্থা
সালিসীব্যবস্থা একটি সম্পূর্ণ সামাজিক প্রক্রিয়া৷ ঝগড়া-বিবাদ মিটাবার জন্যসালিসী ব্যবস্থা একটি সহজ পদ্ধতি৷ এ ব্যবস্থায় একজন নিরপেক্ষ তৃতীয় ব্যক্তিবা ব্যক্তিগন বিবাদরত দলের সাথে সামনাসামনি ও খোলাখুলি ভাবে সমস্যা নিয়েআলোচনা করে সমঝোতায় পৌঁছাতে সাহায্য করে থাকেন৷ অর্থাত্‌ সালিস এমন একটিপ্রক্রিয়া যাতে বিবাদরত ব্যক্তিগন স্বতঃস্ফূর্ত এবং স্বেচ্ছা প্রনোদিত হয়েতাদের সমস্যা সমূহ সমাধানের উদ্দেশ্যে সালিশকারীর উপস্থিতিতে এক বা একাধিকবৈঠকে মিলিত হয়ে সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হয়৷  মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ- ১৯৬১ তে সালিসী ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে  - সালিসী ব্যবস্থা হলোইউনিয়ন পরিষদের আওতায় তালাক , বহুবিবাহ ও খোরপোষ সংক্রান্ত বিষয়গুলোনিষ্পত্তি করার জন্য একটি ক্ষমতাবান আইনগত পরিষদ৷

এক্ষেত্রেসালিসী ব্যক্তি কোনো বিচারক নন এবং তিনি কোনো আইন প্রয়োগও করেননা৷শুধুমাত্র তিনি বিবাদরত দুই দলকে মীমাংসায় পৌঁছাতে আইনের ব্যাখ্যা প্রদানকরে থাকেন মাত্র৷ কিন্তু বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সালিসী ব্যবস্থায় কাউকেকোনোরূপ শাস্তি দেওয়া যাবেনা বা দোষী করা যাবেনা৷ বিশ্বাস ভংগ করা যাবেনাএমনকি এরূপ প্রতিশ্রুতি করা যাবেনা যা কখনো কার্যকর করা সম্ভব নয়৷
৩) সালিস পরিষদের গঠন
ইউনিয়নপরিষদের চেয়ারম্যান (এখানে চেয়ারম্যান বলতে  ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানঅথবা পৌরসভার চেয়ারম্যান অথবা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের মেয়র বা প্রশাসকঅথবা মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ - ১ঌ৬১ অনুযায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ওকর্তব্য পালনের জন্য ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কোনোব্যক্তিকে বোঝায় ) এবং বিবাদরত পক্ষসমূহের প্রত্যেক পক্ষের একজন করে  প্রতিনিধিসহ  মোট ৩ জন নিয়ে সালিসি পরিষদ গঠন করা হবে৷ প্রয়োজনে একাধিকসালিসদার নিয়োগ করা যেতে পারে৷ সালিসদার ব্যক্তি অবশ্যই একজন নিরপেক্ষ ওজ্ঞানী ব্যক্তি হবেন৷

**চেয়ারম্যান সালিসী পরিষদের প্রতিনিধিমনোনয়নের জন্য কতদিনের মধ্যে পক্ষদ্বয়কে নোটিশ দিবেন এবং পক্ষদ্বয় কতদিনেরমধ্যে তাদের প্রতিনিধি মনোনয়ন করে চেয়ারম্যানের  কাছে পাঠাবেন
চেয়ারম্যানেরনিকট বহুবিবাহের অথবা খোরপোশের  দরখাস্ত পেশ করা হলে অথবা তালাকের নোটিশএলে তিনি উভয় পক্ষকে এই মর্মে নোটিশ দিবেন যে , এই নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনেরমধ্যে প্রত্যেকপক্ষ লিখিতভাবে নিজ নিজ প্রতিনিধির নাম মনোনিত করে হাতে হাতেবা রেজিস্ট্রি ডাক যোগে চেয়ারম্যানের নিকট জমা দিবেন ৷

**যদি কোন পক্ষ প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে ব্যর্থ হয়  তাহলে কি হবে
কোনো পক্ষ যদি প্রতিনিধি মনোনিত করতে ব্যর্থ হয় তবে ঐ প্রতিনিধি ছাড়াই সালিস পরিষদ গঠিত হবে৷

**চেয়ারম্যাননিজেই আবেদন করতে চাইলে বা চেয়ারম্যান অমুসলিম হলে অথবা তিনি দায়িত্ব পালনকরতে ইচ্ছা প্রকাশ  না করলে সালিসী পরিষদ কিভাবে গঠিত হবে
কোনোইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অমুসলিম হলে অথবা চেয়ারম্যান নিজেই যদি সালিসীপরিষদের নিকট কোন আবেদন করতে চান বা অসুস্থতা অথবা অন্যকোন কারনে দায়িত্বপালন করতে ইচ্ছা প্রকাশ না করেন , সেক্ষেত্রে ঐ ইউনিয়ন অথবা পৌরসভা হতেএকজন মুসলিম সদস্য সালিসী পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন৷

**যদি চেয়ারম্যানকে নিরপেক্ষ মনে না হয় তাহলে করণীয় কি
যদিকোন পক্ষের নিকট  মনে হয় যে , চেয়ারম্যান অন্য পক্ষের প্রতি পক্ষপাতিত্বকরছেন তবে উক্ত পক্ষ অন্য চেয়ারম্যান নিযুক্তির জন্য নির্ধারিত ব্যক্তির (জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ) নিকট যুক্তিসংগত কারন উল্লেখকরে লিখিত আবেদন করতে পারবেন৷ তিনি (নির্ধারিত ব্যক্তি ) যুক্তিসংগত মনেকরলে ঐ পরিষদের অন্য কোন  মুসলিম সদস্যকে  সালিসী পরিষদের চেয়ারম্যাননিযুক্ত করতে পারবেন৷

**কোন পক্ষ মনোনিত প্রতিনিধি পরিবর্তন করতে চাইলে সেক্ষেত্রে করণীয় কি ?
কোনপক্ষের মনোনিত প্রতিনিধি যদি মারা যান , অসুস্থ হন বা অন্য কোন কারনেসালিসী বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন কিংবা পরে ঐ বৈঠকের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন, সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের পূর্ব অনুমতি নিয়ে পূর্বের মনোনয়ন বাতিল করেনূতন প্রতিনিধি মনোনীত করতেপারবেন৷ এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান কর্তৃক মঞ্জুরকৃত সময়ের মধ্যে নতুন প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে হবে৷

**কোন পক্ষ নিজেই সালিসী পরিষদের প্রতিনিধি হতে চাইলে তিনি তা হতে পারবেন কি ?
সালিসীপরিষদের  নিকট দায়েরকৃত  অভিযোগের সাথে জড়িত কোন পক্ষ সংশ্লিষ্ট অভিযোগনিষ্পত্তির জন্য এই পরিষদের প্রতিনিধি হিসাবে মনোনীত হতে পারবেন না৷

সবসময়মনে রাখবেন , সালিসী ব্যবস্থা একটি আনুষ্ঠানিক সভা৷ যেখানে সালিসদারবিবাদরত দুটি দলের মাঝে এক থেকে দুই মাসের মধ্যে ( যত শীঘ্র সম্ভব ) নামমাত্র খরচে মানসিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ঠিক রেখে কোন মীমাংসায় পৌঁছাতেসহায়তা করেন৷ এখানে কোন শাস্তির ব্যবস্থা থাকেনা কিংবা কাউকে জরিমানা করারওবিধান নেই৷
৪) সালিসী পরিষদের এখতিয়ার
মুসলিমপারিবারিক আইন অধ্যাদেশ - ১ঌ৬১ তে সালিসী পরিষদের এখতিয়ার সম্পর্কে বলাআছে ৷ সে মতে তালাক , বহুবিবাহ ও খোরপোষ সংক্রান্ত  বিরোধসমূহের  মীমাংসা  সালিসী পরিষদ করতে পারবে৷ যেমন -

.:: তালাকের ক্ষেত্রে - তালাকের নোটিশ পাওয়ার পর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কি?
তালাকেরনোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান উভয়পক্ষের মনোনীত প্রতিনিধি নিয়েসালিসী পরিষদ গঠন করবেন৷ সালিসী পরিষদ উভয়পক্ষকে ডেকেসমঝোতারচেষ্টা করবেন৷ সমঝোতার চেষ্টা সফল হতে পারে, আবার ব্যর্থ হতে পারে৷সমঝোতার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী মিলে গেলে তালাক কার্যকরী হবে না৷ তবেসালিসী পরিষদের মাধ্যমে কোন উদ্যোগ নেয়া না হলে নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিন পরতালাক কার্যকরী বলে গণ্য হবে৷

.:: খোরপোষের ক্ষেত্রে- স্ত্রী খোরপোষ দাবি করে আবেদন করলে  সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কি হবে এবং চেয়ারম্যান কিভাবে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করে দিবেন
আইনগতঅন্য বিধান থাকা সত্বেও স্ত্রী খোরপোষ দাবী করে স্বামীর বিরুদ্ধেচেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে পারবেন৷ আবেদন পাওয়ার পর চেয়ারম্যান স্ত্রীএবং স্বামী উভয় পক্ষের মনোনীত একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে সালিসী পরিষদ গঠনকরবেন৷ সালিসী পরিষদ স্ত্রীর দাবির যুক্তি, উভয়পক্ষের সামাজিক অবস্থানযাচাই করে খোরপোষের পরিমাণ নির্ধারণ করে সিদ্ধান্ত দেবেন এবং সে মোতাবেকএকটি সার্টিফিকেট প্রদান করবেন৷ সিদ্ধান্ত মোতাবেক খোরেপাষ এর জন্যনির্ধারিত অর্থ পরিশোধ না করলে তা বকেয়া ভূমি রাজস্ব আদায়ের মতো আদায়যোগ্যহবে৷

.:: বহুবিবাহের ক্ষেত্রে - বহুবিবাহ করার জন্য কেউ চেয়ারম্যানের নিকট আবেদনকরলে চেয়ারম্যান  কি করবেন এবং কি কি কারণ থাকলে  বহু বিবাহের অনুমতি দিবেন
আবেদন পত্র পাওয়ার পর চেয়ারম্যান স্ত্রী এবং স্বামী উভয় পক্ষের পছন্দ মত একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে সালিসী পরিষদ(Arbitration Council) গঠনকরবেন৷  সালিসী পরিষদের কাছে স্বামীর আর একটি বিবাহ করার ইচ্ছা ন্যায়সঙ্গতমনে হলে তারা স্বামীকে বহুবিবাহ করার জন্য তারিখ ও স্মারক নং সহ লিখিতঅনুমতিপত্র দেবেন৷ তবে বহুবিবাহের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে সালিসী পরিষদ যেবিষয়গুলো বিবেচনায় আনবেন সেগুলো  হলো :

·         বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যাত্ব,

·         শারীরিক মারাত্বক দূর্বলতা,

·         দাম্পত্য জীবন পালনে অক্ষমতা,

·         মানসিকভাবে অসুস্থতা এবং আদালতের নিকট গ্রহণযোগ্য  অন্যান্য কারণ ইত্যাদি৷
সালিসী পরিষদের বিনা অনুমতিতে বহুবিবাহ  করলে স্ত্রী  এক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা নিতে পারেন
কোনব্যক্তি যদি সালিসী পরিষদ এর অনুমতি ব্যতিত উল্লেখিত আইনগত পদ্ধতি লংঘনকরে বহুবিবাহ করে তাহলে স্ত্রী আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন৷ স্ত্রীর অভিযোগেরভিত্তিতে স্বামীর একবছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা দশ হাজার টাকাপর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয়বিধ দন্ড হবে৷ প্রয়োজন মনে করলে স্ত্রী স্বামীকেতালাক দিতে পারেন এবং বকেয়া সম্পূর্ণ দেনমোহরের টাকা ভুমি রাজস্ব রূপে  আদায়যোগ্য হবে৷

এর বাইরে  ছোট-খাট ঝগড়া-বিবাদ ব্যতীত অন্য কোন বিরোধ মীমাংসা করার ক্ষমতা সালিসী পরিষদের নাই৷
৫) যে সকল বিষয়ে সালিসী করা যাবে না:
বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৫ নং ধারা অনুযায়ীঅনেকগুলো গুরুতর অপরাধ সালিসীতে মীমাংসা করা যাবে না৷ এর মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে :

১৷ যে কোনো কারণে সংঘটিত হত্যাকান্ড
২৷ ধর্ষণ
৩৷ অপহরণ
৪৷ ডাকাতি এবং
৫৷ আরও বিভিন্ন গুরুতর অপরাধ৷
 

উদাহরণ:আব্দুল জলিলের বাড়িতে জামিলা নামে এক মেয়ে কাজ করতো৷ কোন একদিন বাড়ীতে কেউ নাথাকার সুযোগে হাশেম জামিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করলো৷ জামিলা মামলা করবে বলে উল্লেখ করলে জলিল জামিলাকে ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সালিসীতে রাজি করালো৷ গ্রাম্য সালিস জলিলকে দোষী সাব্যস্ত করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে বললো৷ এই মীমাংসাটি সঠিক নয়৷ কারণ বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণ সালিসী বৈঠকেমীমাংসাযোগ্য নয়৷